সেরা ৫টি স্টক, যেগুলো আপনার ওয়াচলিস্টে থাকা উচিত
শেয়ার বাজারে সঠিক সময়ে সঠিক স্টক বেছে নেওয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে এমন কিছু স্টক রয়েছে, যেগুলো গত ৩ বছরে ধারাবাহিকভাবে রেভিনিউ বাড়িয়েছে, কিন্তু দাম এখনও ৫২-সপ্তাহের লো-এর কাছাকাছি রয়েছে। এর ফলে এখনই এই স্টকগুলো পর্যবেক্ষণ করার এবং সঠিক সময়ে বিনিয়োগের একটি বড় সুযোগ রয়েছে।
এই স্টকগুলো মূলত পাওয়ার, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও অটোমোবাইল সেক্টরের অন্তর্গত, যেগুলোর ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
১. হাই-টেক পাইপস (Hi-Tech Pipes)
হাই-টেক পাইপস হলো ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় স্টিল প্রোডাক্ট নির্মাতা কোম্পানি। তারা কনস্ট্রাকশন, অটোমোটিভ, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এবং কৃষি—সব সেক্টরের জন্য পাইপ তৈরি করে এবং বর্তমানে ১৭টি রাজ্যে সাপ্লাই করছে।
গত ৩ বছরে কোম্পানির সেলস গ্রোথ ১৯% এবং নেট প্রফিট গ্রোথ ২৯% হয়েছে, যা এর শক্তিশালী পারফরম্যান্সের প্রমাণ।
বর্তমানে শেয়ারটি প্রায় ₹৯৬ টাকায় ট্রেড করছে, যা তার ৫২-সপ্তাহের হাই ₹২১০ থেকে অনেক নিচে।
যারা ইনফ্রা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের গ্রোথে বাজি ধরতে চান, তাদের জন্য এটি ভালো এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে।
২. এনসিসি লিমিটেড (NCC Limited)
ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরে এনসিসি একটি বড় নাম। কোম্পানির হাতে রয়েছে ₹৭০,০০০ কোটির বিশাল অর্ডার বুক, যা ভবিষ্যতে তাদের রেভিনিউ বাড়াতে বড় ভূমিকা নেবে।
গত কয়েক বছরে রেভিনিউ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং নেট প্রফিটও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। FY25-এ রেকর্ড প্রফিট রিপোর্ট করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এখন শেয়ারটির দাম প্রায় ₹২১৮, যা তার ৫২-সপ্তাহের হাই ₹৩৩০ থেকে অনেক কম।
যারা ইনফ্রাস্ট্রাকচার বুমের সুবিধা নিতে চান, তাদের জন্য এনসিসি একটি শক্তিশালী প্রার্থী।
৩. আরইসি লিমিটেড (REC Limited)
পাওয়ার সেক্টরের ফাইন্যান্সিং নিয়ে কাজ করা একটি সরকারী সংস্থা হলো আরইসি লিমিটেড।
ভারতের রিনিউয়েবল এনার্জি প্রজেক্ট ফান্ডিং-এ তাদের অবদান বিশাল, আর তাই তারা দেশের সবচেয়ে বড় NBFC হিসেবে পরিচিত।
গত ৩ বছরে কোম্পানির রেভিনিউ গ্রোথ হয়েছে ১৩% এবং নেট প্রফিট বেড়েছে ১৭%।
শেয়ারটি বর্তমানে প্রায় ₹৪০৪-এ ট্রেড করছে, যা ৫২-সপ্তাহের হাই ₹৬৫০ থেকে অনেক কম।
ভারতের গ্রিন এনার্জি লক্ষ্যমাত্রা এবং রিনিউয়েবল প্রজেক্ট বাড়ার সাথে সাথে আরইসি ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হতে পারে।
৪. জেবিএম অটো (JBM Auto)
ইলেকট্রিক ভেহিকল (EV) সেক্টরের অন্যতম উদীয়মান কোম্পানি হলো জেবিএম অটো।
তাদের হাতে রয়েছে ১০,০০০টিরও বেশি ইলেকট্রিক বাসের অর্ডার বুক, যা আগামী দিনে কোম্পানির আয় বাড়াবে নিশ্চিতভাবেই।
গত ৩ বছরে রেভিনিউ গ্রোথ হয়েছে প্রায় ২০%, আর নেট প্রফিটও ক্রমশ বাড়ছে।
বর্তমানে শেয়ারটির দাম প্রায় ₹৬৪২, যেখানে এর ৫২-সপ্তাহের হাই ছিল প্রায় ₹১,০৪৭।
৫. ভারত বিজলী (Bharat Bijlee)
বিদ্যুৎ ও অটোমেশন সেক্টরের একটি শক্তিশালী কোম্পানি হলো ভারত বিজলী।
কোম্পানিটি ট্রান্সফর্মার, ইলেকট্রিক মোটর, অটোমেশন সিস্টেম তৈরি করে এবং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য টার্নকি সল্যুশন সরবরাহ করে।
গত ৩ বছরে কোম্পানির রেভিনিউ গ্রোথ হয়েছে প্রায় ১৫%, আর নেট প্রফিট বেড়েছে ৩৪%।
বর্তমানে শেয়ারটি প্রায় ₹২,৮০০-এ ট্রেড করছে, যা তার ৫২-সপ্তাহের হাই ₹৫,৪৭০ থেকে অনেক কম।
ভারতের পাওয়ার সেক্টরের আধুনিকীকরণ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন ট্রেন্ড বাড়লে, এই স্টকটি আগামী দিনে আরও লাভ দিতে পারে।
কেন এই স্টকগুলোতে নজর দেবেন ?
সবগুলো স্টক শক্তিশালী ফান্ডামেন্টালস এবং ধারাবাহিক রেভিনিউ গ্রোথ দেখাচ্ছে।
বর্তমানে ৫২-সপ্তাহের নিম্ন দামের কাছাকাছি, তাই বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে।
সেক্টরগুলো—পাওয়ার, ইনফ্রা এবং অটো—আগামী ৫ বছরে দ্রুত বাড়তে চলেছে।
তবে মনে রাখবেন, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। নিজের গবেষণা করুন এবং প্রয়োজনে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
হাই-টেক পাইপস, এনসিসি লিমিটেড, আরইসি লিমিটেড, জেবিএম অটো এবং ভারত বিজলী—এই পাঁচটি স্টকই ২০২৫-২০২৬ সালে নজরে রাখার মতো সেরা অপশন।
যারা আন্ডারভ্যালু স্টক খুঁজছেন বা গ্রোথ সেক্টরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন, তারা অবশ্যই এগুলোকে ওয়াচলিস্টে রাখুন।
আপনার মতে, এই স্টকগুলির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়? নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. এই স্টকগুলোতে বিনিয়োগ কি নিরাপদ?
স্টক মার্কেটে কোনো বিনিয়োগই পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে এই স্টকগুলো ফান্ডামেন্টালি শক্তিশালী এবং সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে।
২. কত দিনের জন্য এই স্টকগুলো ধরে রাখা উচিত?
এই স্টকগুলো মূলত ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য ধরে রাখার উপযুক্ত। ধৈর্য ধরে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলেই সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
৩. অল্প টাকাতেও কি এই স্টকগুলো কেনা যায়?
অবশ্যই। শেয়ার বাজারে ন্যূনতম ১ শেয়ার থেকেও বিনিয়োগ শুরু করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ₹৫০০ বা ₹১০০০ দিয়েও এই স্টকগুলোর মধ্যে একটি কিনতে পারেন।
৪. ডিভিডেন্ড পাওয়ার সুযোগ কি আছে?
হ্যাঁ, বিশেষ করে REC Limited এবং Bharat Bijlee নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদান করে থাকে। অন্য স্টকগুলোতেও ভবিষ্যতে ডিভিডেন্ড পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন স্টক সেরা?
নতুনদের জন্য REC Limited বা NCC Limited তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, কারণ এগুলো সরকারি প্রকল্প এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরের ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালীভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
৬. বিনিয়োগের আগে বিশ্লেষণ কীভাবে করব?
কোম্পানির রেভিনিউ গ্রোথ ও প্রফিট মার্জিন যাচাই করুন।
ডেট-টু-ইকুইটি রেশিও কম কিনা দেখুন।
বাজারের ট্রেন্ড এবং সেক্টরের ভবিষ্যৎ চাহিদা বিশ্লেষণ করুন।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৭. এক বছরের মধ্যে লাভ পাওয়া সম্ভব কি?
স্বল্পমেয়াদে নিশ্চিত লাভ নেই, তবে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, পাওয়ার এবং ইভি সেক্টরের দ্রুত বৃদ্ধি এই স্টকগুলোকে উচ্চতর দামে নিয়ে যেতে পারে।
Pingback: এই ৩ স্টক হতে পারে আগামী দিনের মাল্টিব্যাগার! - মার্কেট কথা